“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ সম্পর্কে সংবাদ দেব না? “কবীরা গুনাহ হলো: আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা।” “সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় থেকে তোমরা বিরত থাকবে আমি অংশীদারদের চেয়ে অংশীদারিত্ব [শির্ক] থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারিত্ব [শির্ক] সহ বর্জন করে থাকি তবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তার আমল যাই হোক না কেন।” “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক না করে সাক্ষাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে যে, সে তাঁর সাথে শরীক স্থির করেছে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” “যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তু (লজ্জাস্থান) এর জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।” “জান্নাত তোমাদের জুতার ফিতার চেয়েও বেশি নিকটে আর জাহান্নামও অনুরুপ।” “জাহান্নাম প্রবৃত্তি দিয়ে বেষ্টিত। আর জান্নাত বেষ্টিত দুঃখ-ক্লেশ ও অপছন্দনীয় জিনিস দিয়ে।” “যখন দু’জন মুসলিম তলোয়ার নিয়ে পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তির অবস্থান হবে জাহান্নাম “নিশ্চই হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও ধন-সম্পদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি।” প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর নিশ্চয় প্রতিটি মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে “কিছু সংখ্যক মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে থাকে। কিয়ামত দিবসে তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন নির্ধারিত।” প্রত্যেক আদম সন্তানই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাকারীগণ উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কোন আমল দ্বারা মানুষ বেশি জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন: “আল্লাহর তাকওয়া ও উত্তম চরিত্রের কারণে “আমি আমার মৃত্যুর পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাইনি।” “তোমাদের মধ্যে কেউ (পূর্ণ) মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ হতে প্রিয়তম হই।” যে ব্যক্তি কোনো কিছু ঝুলালো তাকে তার দিকে সপর্দ করা হবে। “পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। “الحمد لله” ‘আলহামদু লিল্লা ‘ মিযান-দাঁড়িপাল্লা পরিপূর্ণ করে দেয় এবং “سبحان الله والحمد لله” ‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহ’ কালেমা আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দেয়। আপনি আমাকে ইসলাম সমন্ধে এমন কথা বলে দিন, আপনার পরে যেনো তা আমাকে আর কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে না হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: «قُلْ: آمَنْتُ بِاللهِ، ثُمَّ اسْتَقِمْ». “তুমি বলো, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। তারপর এর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।” “যখন আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করলেন, তখন তিনি জিবরীল ‘আলাইহিস সালামকে জান্নাতে প্রেরণ করে বললেন এদের ’আযাব দেয়া হচ্ছে; তবে কোন গুরুতর অপরাধের জন্য তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের একজন পেশাব হতে সতর্ক থাকত না। আর অপরজন চোগলখোরী করে বেড়াত।” “দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ-শ্যামল এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অত:পর তিনি দেখবেন তোমরা কিভাবে আমল করো? সুতরাং তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে। তুমি যাকে ভালবাস, তারই সাথী হবে। সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফু দানকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফু দানকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে। হে অন্তরের পরিবর্তনকারী, আমার অন্তরকে আপনার দীনের ওপর স্থির রাখুন। যে ব্যক্তি সত্য অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট শাহাদাত প্রার্থনা করবে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছাবেন; যদিও তার মৃত্যু নিজ বিছানায় হয়। মু’মিন পুরুষ ও নারীর জান, সন্তান-সন্ততি ও তার ধনে (বিপদ-আপদ দ্বারা) পরীক্ষা হতে থাকে, পরিশেষে সে আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে নিষ্পাপ হয়ে সাক্ষাৎ করবে। মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজই তার জন্য ভালো। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। যদি তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে সে আল্লাহর শোকর আদায় করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর যদি তাকে ক্ষতি স্পর্শ করে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আমি কি তোমাদের এমন বিষয় অবহিত করবো না, যা আমার মতে তোমাদের জন্য মসীহ দাজ্জালের চেয়েও ভয়ংকর? রাবী বলেন, আমরা বললাম, হ্যাঁ, অবশ্যই। তিনি বলেন, গোপন শির্ক। মানুষ সালাত পড়তে দাঁড়ায় এবং লোকের দৃষ্টির কারণে সুন্দরভাবে সালাত আদায় করে। ‘হে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম! এটি একটি পাথর, সত্তর বছর আগে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে। সেটি এখনো জাহান্নামের নিচে পতিত হচ্ছে, যখন তার তলদেশে গিয়ে পৌঁছল, তোমরা তার ধপাস করে পড়ার শব্দ শুনেছ। রোগের সংক্রমণ, অশুভ লক্ষণ, অশুভ পেঁচা ও সফর মাসের অনিষ্ট বলতে কিছু নেই। যে কোন প্রাণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, তার পাপের একটা অংশ আদমের প্রথম সন্তান (কাবীল) এর উপর বর্তাবে। কেননা, সে হত্যার রীতি সর্বপ্রথম চালু করেছে। তুমি তোমার যবানকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখ, তোমার ঘর যেন তোমার জন্যে যথেষ্ট হয় আর স্বীয় গুনাহের জন্য ক্রন্দন কর। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত, “নিশ্চয় আল্লাহর পথে মুজাহিদদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একশটি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের ন্যায়।” দুনিয়া যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান হতো, তাহলে তিনি কোনো কাফেরকে তার এক ঢোক পানিও পান করাতেন না। দুটি চোখ জাহান্নাম স্পর্শ করবে না, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে আর যে চোখ আল্লাহর পথে পাহারায় বিনিদ্র রাত যাপন করে। নিশ্চয় প্রত্যেক উম্মতের একটি ফিতনা রয়েছে। আমার উম্মতের ফিতনা হলো ধন-সম্পদ। আমার সকল উম্মত ক্ষমা পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত তোমাদের প্রত্যেকেই যেন আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা অবস্থায় মারা যায়। যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় সমান সোনা থাকত, তাহলে আমি এতে আনন্দিত হতাম যে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাকী রেখে অবশিষ্ট সবটাই তিন দিন অতিবাহিত না হতেই আল্লাহর পথে খরচ করে ফেলি। আখেরাতের মোকাবেলায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় অতঃপর দেখে তা কতটুকু পানি নিয়ে ফিরে। ‘‘আমি তোমাদের উপর যার আশঙ্কা করছি তা হল এই যে, তোমাদের উপর দুনিয়ার শোভা ও সৌন্দর্য (এর দরজা) খুলে দেওয়া হবে।’’ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া জিনিস ব্যয় করবে তাকে জান্নাতের সব দরজা থেকে ডাকা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব, যে সালাত আদায়কারী, তাকে সালাতের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে মুজাহিদ তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। নিশ্চয় কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে ঐ ব্যক্তির, যার পায়ের তলার নিচে আগুনের দু’টি আঙ্গারা রাখা হবে, যার ফলে তার মাথার মগজ গলতে থাকবে। সে মনে করবে না যে, তার চেয়ে কঠিন শাস্তি অন্য কেউ ভোগ করছে। অথচ সেই সবচেয়ে কম শাস্তিতে থাকবে। তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে: তার আত্মীয়-স্বজন, তার সম্পদ ও তার আমল। অতঃপর দু’টি জিনিস ফিরে আসে এবং একটি জিনিস রয়ে যায়। তার আত্মীয়-স্বজন ও তার ধন-সম্পদ ফিরে আসে, কিন্তু তার আমল (তার সঙ্গে) রয়ে যায়। তুমি দুনিয়া বিমুখ হও আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসবেন এবং মানুষের নিকট যা আছে তা থেকে বিমুখ হও। মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে। পুণ্য হলো সৎ স্বভাবের নাম। আর পাপ হলো তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক এ কথা তুমি অপছন্দ কর। ধু ধু ময়দানে উট হারানোর পর পুনরায় পেয়ে তোমাদের কেউ যেরূপ খুশি হয়, আল্লাহ তার চেয়েও বেশী খুশি হন বান্দার তাওবায়। “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তওবাহ সে পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত না হয়।” নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার হাত রাতে প্রসারিত করেন যেন দিনের অপরাধীরা তাওবা করে এবং দিনে তার হাত প্রসারিত করেন যেন রাতের অপরাধীরা তাওবা করে, যে পর্যন্ত না পশ্চিম আকাশে সূর্য উঠবে। তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মতো থাক। তোমরা এক অপরের প্রতি হিংসা করো না, কেনা-বেচাতে জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না, একে অপরের প্রতি শত্রুতা রেখো না, একে অপর থেকে (ঘৃণাভরে) মুখ ফিরায়ো না এবং একে অপরের (জিনিস) কেনা-বেচার উপর কেনা-বেচা করো না। আর হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে যাও। যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা গ্রহণ করবেন। আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব, কে জাহান্নামের জন্য হারাম অথবা কার জন্য জাহান্নাম হারাম? জাহান্নাম হারাম হলো প্রত্যেক নিকটবর্তী, সহজ-সরল ও কোমল ব্যক্তির জন্য। যে ব্যক্তি গভীর রাত্রিকে ভয় করে সে যেন সন্ধ্যা রাত্রেই সফর শুরু করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যারাত্রে চলতে শুরু করে সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। সাবধান! আল্লাহর পণ্য বড় দামী। শোনো! আল্লাহর পণ্য হলো জান্নাত। জাহান্নামীদের কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত আগুনে স্পর্শ করবে। করো হাটু পর্যন্ত আগুনে স্পর্শ করবে। কারো কোমর পর্যন্ত আবার কারো কণ্ঠ পর্যন্ত আগুন স্পর্শ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।” হে আদম সন্তান! যখন তুমি আমাকে ডাকবে ও আমার ক্ষমার আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন; আমি কোনো পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করব; আমি কোনো পরোয়া করি না। “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে। সেদিন তার সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা তা টেনে নিয়ে যাবে।” আল্লাহর নিকট শক্তিশালী মু’মিন দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা অধিক উত্তম ও প্রিয়। তাদের সবার মধ্যে রয়েছে কল্যাণ। যা তোমার উপকারে আসে তার প্রতি লোভ কর এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। তবে তুমি অক্ষম হবে না। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, “আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র।” আর তাঁকে (এটাও) জিজ্ঞাসা করা হল যে,‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, “মুখ ও যৌনাঙ্গ (র্অথাৎ, উভয় দ্বারা সংঘটিত পাপ)।” ওহে, আমি কি তোমাদের জানাবো চোগলখুরী কী? চোগলখুরী হচ্ছে মানুষের মাঝে কথা চালাচালি। অতি শীঘ্রই মুসলিমের উত্তম সম্পদ হবে কয়েকটি বকরী, যা নিয়ে সে পাহাড়ের চূড়ায় অথবা বৃষ্টিপাতের স্থানে চলে যাবে। পুলসিরাত জাহান্নামের দু’ তীরের মাঝে স্থাপন করা হবে। তাতে থাকবে সাদান বৃক্ষের কাঁটা সদৃশ কাঁটাসমূহ। লোকজন তার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে। কতক মুসলিম নিরাপদে তার উপর দিয়ে অতিক্রম করবে, কতক কাঁটার আঁচড় খেয়ে, কতক কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে থাকার পর নাজাত পাবে এবং কতক মুখ থুবড়ে জাহান্নামের তলদেশে নিক্ষিপ্ত হবে। জান্নাতীরা যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে যে, তোমাদের জন্য এখন অনন্ত জীবন; তোমরা আর কখনো মরবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সু-স্বাস্থ্য; তোমরা আর কখনো অসুস্থ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির যৌবন; তোমরা আর কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমাদের জন্য এখন চির সুখ ও পরমানন্দ; তোমরা আর কখনো দুঃখ-কষ্ট পাবে না। ‘আমাদের কি হয়েছে যে, সন্তুষ্ট হব না? হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো আমাদেরকে সেই জিনিস দান করেছ, যা তোমার কোন সৃষ্টিকে দান করনি।’ তখন তিনি বলবেন, ‘এর চেয়েও উত্তম কিছু তোমাদেরকে দান করব না কি?’ তারা বলবে, ‘এর চেয়েও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে?’ মহান প্রভু জবাবে বলবেন, ‘তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি অনিবার্য করব। অতঃপর আমি তোমাদের প্রতি কখনো অসন্তুষ্ট হব না।’’ জান্নাতীদের যখন জান্নাতে দাখিল করা হবে, তখন মহান বর্কতময় আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা কী চাও যে, আমি তোমাদের আরো বেশি দিই?’ তারা বলবে, ‘তুমি কি আমাদের মুখমণ্ডল উজ্জল কর নি? তুমি কি আমাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট কর নি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও নি?’ অতঃপর আল্লাহ পর্দা সরিয়ে দিবেন (এবং তারা তাঁর চেহারার দর্শন লাভ করবে, তখন তারা উপলব্দি করবে) তাদের এমন কোনো জিনিস প্রদান করা হয় নি যা তাদের নিকট তাদের রবকে দেখা অপেক্ষা বেশি প্রিয়। জান্নাতে মুমিনের জন্য ফাঁপা মুক্তার একটি তাঁবু হবে। আকাশে এর দৈর্ঘ হবে ষাট মাইল। তাতে মুমিনের পরিবার-পরিজন থাকবে। মুমিন তাদের চতুষ্পার্শ্বে ঘুরাফেরা করবেন; তাদের কেউ একে অপরকে দেখবে না।” “অবশ্যই জান্নাতীগণ তাদের উপরের প্রাসাদের অধিবাসীদের এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আকাশের পূর্ব অথবা পশ্চিম দিগন্তে উজ্জল স্থির তারকা দেখতে পাও। এটি হবে তাদের মর্যাদার ব্যবধানের জন্য।” আল্লাহ আদম সন্তানের যিনার যে অংশ নির্ধারিত করেছেন, তা সে অবশ্যই করবে। আর দু’চোখের যিনা হলো দৃষ্টিপাত করা, কানের যিনা শ্রবণ করা, জিহ্বার যিনা কথোপকথন, হাতের যিনা স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হেঁটে যাওয়া, অন্তরের যিনা আকাংখা ও কামনা করা। আর লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে কিংবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। দুই প্রকার জাহান্নামী আমি (এখন পর্যন্ত) প্রত্যক্ষ করি নি (অর্থাৎ আমার পরে তাদের আবির্ভাব ঘটবে): (১) এমন এক সম্প্রদায় যাদের কাছে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা জনগণকে প্রহার করবে। (২) এমন এক শ্রেণির মহিলা, যারা (এমন নগ্ন) পোশাক পরবে যে, (বাস্তবে) উলঙ্গ থাকবে, (পর পুরুষকে) নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করবে ও নিজেরাও (পর পুরুষের প্রতি) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে উটের হেলে যাওয়া কুঁজের মতো। এ ধরনের মহিলারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ঘন্টা বা ঘুঙুর শয়তানের বাঁশি। হে মহিলা সমাজ! তোমরা সাদকাহ করতে থাক। কারণ, আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তারা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক, আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখি নি। “সর্বশেষে যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তার সম্পর্কে অবশ্যই আমার জানা আছে। এক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে (বা বুকে ভর দিয়ে) চলে জাহান্নাম থেকে বের হবে। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্লাহ বলবেন, ‘যাও জান্নাতে প্রবেশ কর।’ সুতরাং সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে সে ফিরে এসে বলবে, ‘হে রব! জান্নাত তো পরিপূর্ণ দেখলাম।’ আল্লাহ আয্যা অজাল্লাহ বলবেন, ‘যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর।’ তখন সে জান্নাতের কাছে এলে তার ধারণা হবে যে, জান্নাত তো ভরে গেছে। তাই সে আবার ফিরে এসে বলবে, ‘হে রব! জান্নাত তো ভরতি দেখলাম।’ “মৃত্যুকে সাদা-কালো মিশ্রিত একটি ভেড়ার আকৃতিতে উপস্থিত করা হবে “তোমাদের কাছে বিদ্যমান আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তরভাগের একভাগ “তোমরা আলিমদের সাথে বড়াই করার জন্য ইলম শিখবে না, নির্বোধের সাথে বিতর্ক করার জন্যও নয়, “আল্লাহ তা‘আলা সিরাতে মুস্তাকীমের একটি উদাহরণ পেশ করেছেন যখন তুমি কাউকে দেখবে সে এমন কিছুর অনুসরণ করছে, যার মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে, তাহলে জেনে রাখবে, তারাই হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন- ‘তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাকবে তোমার সাথে তারা যে খিয়ানত করেছে, অবাধ্য হয়েছে এবং মিথ্যা বলেছে আর তুমি এ সবের জন্য তাদের যে শাস্তি দিয়েছ তা হিসাব করা হবে। {ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ} আমার বান্দা আমার আগেই তার প্রাণ উৎসর্গ করল (অর্থাৎ আত্মহত্যা করল)। কাজেই আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম। মানুষ এক ঘুম ঘুমাবে আর তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেওয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর মত তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। পুনরায় এক ঘুম ঘুমাবে। আবারো তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন আগুনের আঙ্গারার মত তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। হে আল্লাহর রসূল! নিঃসন্দেহে আমি একে ভালবাসি।’ (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি কি (এ কথা) তাকে জানিয়েছ?” সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, “তাকে জানিয়ে দাও।” সুতরাং সে (দ্রুত) তার পিছনে গিয়ে (তাকে) বলল, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে তোমাকে ভালবাসি।’ সে বলল, ‘যাঁর ওয়াস্তে তুমি আমাকে ভালবাস, তিনি তোমাকে ভালবাসুন।’ আল্লাহ তাআলাকে সম্মান করার এক প্রকার হচ্ছে: পাকা চুলওয়ালা বয়স্ক মুসলিম, সীমালঙ্ঘন ও অতিরঞ্জন পরিহারকারী কুরআনের বাহক (হাফেয ও আলেম) এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর সম্মান করা। যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান জানে না সে আমার দলভুক্ত নয়। আমি তোমার নিকট আল্লাহর সংবাদ বাহক যে, তুমি যেরূপ তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাস সেরূপই আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ভালবাসেন। মিসকীন সে নয়, যাকে একটি খেজুর এবং দু’টি খেজুর এবং এক গ্রাস বা’ দুই গ্রাস (অন্ন) দেওয়া হয়, বরং মিসকীনতো ঐ ব্যক্তি(অভাব থাকা সত্বেও) চাওয়া থেকে দূরে থাক। জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে তর্ক-বির্তক হলো। জাহান্নাম বললো, যতো স্বৈরাচারী যালিম ও অহংকারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। জান্নাত বলল, ফকীর-মিসকীন ও দুর্বল ব্যক্তিরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। তোমরা বহু এমন (পাপ) কাজ করছ, সেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও সূক্ষ্ম (নগণ্য)। কিন্তু আমরা সেগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে বিনাশকারী মহাপাপ বলে গণ্য করতাম। আল্লাহ তা‘আলা যখন তার কোনো বান্দার কল্যাণ চান তখন তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে তাকে শাস্তি প্রদান করেন। আর যখন তিনি তার কোনো বান্দার অকল্যাণ চান তখন তাকে তার অপরাধের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। যাতে কিয়ামতের দিন তিনি তাকে পুরাপুরি শাস্তি দেন। তোমাদের দুর্বলদের কারণেই তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়। “আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘আমার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পরস্পরকে যারা ভালবেসেছিল তারা কোথায়? তাদের জন্য রয়েছে নূরের মিম্বারসমূহ। যার প্রতি নবী ও শহীদগণ আগ্রহ করবে। হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি কেউ আমার মাল (অবৈধভাবে) নিতে আসে তাহলে কী করতে হবে?’ তিনি বললেন, “তুমি তাকে তোমার মাল দিবে না। দুনিয়া হলো মু’মিনের জেলখানা আর কাফিরের জান্নাত আমি আসহাবে সুফ্ফার সত্তরজনকে দেখেছি, তাদের কারো গায়ে বড় চাদর ছিল না। এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুম্বন করে ফেলল। পরে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি অবগত করালো। তখন আল্লাহ তা‘আলা আয়াত নাযিল করেন: “আর আপনি সালাত কায়েম করুন দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে। নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়।” (সূরা হূদ, আয়াত: ১১৪) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি হদ্দ তথা শরী‘আত নির্ধারিত শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কাজ করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আমার ওপর তা প্রয়োগ করুন। আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে যা দেওয়ার সবই দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমরা আশংকা করছি যে, আমাদের সৎকর্মগুলো (বিনিময়) আগেই (এ দুনিয়াতে) দিয়ে দেওয়া হয় নি তো? হে হাকীম, এই সম্পদ শ্যামল সুস্বাদু। যে ব্যক্তি প্রশস্ত অন্তরে (লোভ ছাড়া) তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় হয়। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ তা গ্রহণ করে তার জন্য তা বরকতময় করা হয় না। যেন সে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মিটে না। আর উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম। আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়েছিলাম, তখন আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, যারা তাতে প্রবেশ করেছেন তাদের অধিকাংশই হলো দরিদ্র জনগণ। আর যারা ধনী তারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে আছে। “আমার বিশ্বাস তোমরা শুনেছ, আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কোনো কিছু নিয়ে এসেছেন।” হে আল্লাহ! আখিরাতের জীবন ছাড়া আর কোনো জীবন নয় নিশ্চয় আল্লাহর যিকির এবং তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট সহায়ক অপরাপর আমল, আলিম এবং তালিবে ইলম ছাড়া দুনিয়া ও দুনিয়াতে যা কিছু আছে সব-ই অভিশপ্ত। এ ব্যক্তি দুনিয়া ভর্তি ঐরূপ লোকের চেয়ে অনেক উত্তম। যদি মুমিন জানত যে, আল্লাহর নিকট কী শাস্তি রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাতের আশা করত না। আর যদি কাফের জানত যে, আল্লাহর নিকট কী করুণা রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না। আল্লাহর কসম, আল্লাহর নিকট দুনিয়া তোমাদের কাছে এটার চেয়েও বেশী মূল্যহীন। যে ব্যক্তি আমাকে এ নিশ্চয়তা দিবে যে, সে মানুষের কাছে কোনো কিছু চাইবে না, আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব বলে, ইসলামকে দীন হিসেবে ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী রূপে মেনে নিলো, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম আমাদের নিকট দিয়ে গেলেন, তখন আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর মেরামত করছিলাম। যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হলো, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের মাংস ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় ঝুঁকে থাকতেন, কিন্তু পেট ভরার জন্য নিম্নমানের খেজুরও পেতেন না।’ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়াতে সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভালো জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে রব! আর জান্নাতীদের মধ্য থেকে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে চুবানোর পর বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি দুনিয়াতে কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার ওপর কি কখনো বিপদ গেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে আমার রব! মদিনাতে কিছু লোক এমন আছে যে, তোমরা যত সফর করছ এবং যে কোন উপত্যকা অতিক্রম করছ, তারা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। অসুস্থতা তাদেরকে মদিনায় আটকে রেখেছে। মানুষ পেট থেকে অধিক নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। আমার নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হলো। ফলে আমি আজকের মত ভাল ও মন্দ (একত্রে) কোনো দিনই দেখি নি। যদি তোমরা তা জানতে, যা আমি জানি, তাহলে কম হাসতে আর বেশি কাঁদতে। যদি আদম সন্তানের সোনার একটি উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দু’টি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে। আর যে তাওবা করে, আল্লাহ তাওবা গ্রহণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী পাঠালেন যে, তোমরা পরষ্পর বিনয়ী হও, যেন কেউ কারো ওপর সীমালঙ্ঘন না করে এবং কেউ কারো ওপর অহঙ্কার না করে। তার কিছু্ বাকী নেই? অর্থাৎ বকরির। তিনি বললেন, কাঁধ ছাড়া কিছু্ই বাকী নেই, তিনি বললেন, সবই বাকী আছে, কাঁধ ছাড়া। সে ব্যক্তি সফলকাম যে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে আর আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ভোর করেছে এমতাবস্থায় যে সে তার গৃহ-পরিবারে নিরাপদে আছে, দেহে সুস্থতা রয়েছে আর তার কাছে সে দিনের খাবারও রয়েছে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়াই একত্র করা হলো। তিন শ্রেণির লোকদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা [কিয়ামতের দিন] কথা বলবেন না, তাদেরকে [গুনাহ মাফের মাধ্যমে] পবিত্র করবেন না, বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে, বৃদ্ধ জিনাকারী, অহংকারী গরীব, আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে তার ব্যবসায়ী পণ্য বানিয়েছে অর্থাৎ কসম করা ব্যতীত সে পণ্য ক্রয় করে না, কসম করা ব্যতীত পণ্য বিক্রয়ও করে না। আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর একজন ক্রীতদাস ছিল, চুক্তি অনুযায়ী সে তার কাছে ধার্যকৃত কর আদায় করত। আর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সেই আদায়কৃত অর্থ ভক্ষণ করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘আদবা’ নামক একটি উষ্ট্রী ছিল। কোনো উষ্ট্রী তার আগে যেতে পারতো না। আল্লাহ যখন কোনো জাতিকে শাস্তি দিতে চান, তখন শাস্তি তাদেরকেও স্পর্শ করে যারা তাদের ভেতর থাকে (অথচ তাদের মতাবলম্বী নয়)। অতঃপর তাদের সবাইকে আমল হিসেবে উত্থিত করা হবে। তোমরা জমি-জায়গা, বাড়ি-বাগান ও শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না। তাহলে তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি রেখা টানলেন এবং বললেন, এটা মানুষ আর এটা তার আয়ু। মানুষ যখন এ অবস্থায় থাকে হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (মৃত্যু) এসে যায়। “(শামের) সাইহান ও জাইহান, (ইরাকের) ফুরাত এবং (মিসরের) নীল প্রত্যেকটি নদীই জান্নাতের নদী। জান্নাত ও জাহান্নাম বিতর্ক করল। জাহান্নাম বলল, আমাকে অহংকারী ও প্রতাপশালীদের দ্বারা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর জান্নাত বলল, আমার কি হলো যে, আমার মধ্যে দূর্বল, অবহেলিত ও মূল্যহীন লোক ব্যতীত কেউ প্রবেশ করবে না? দু’টি জান্নাতের পাত্রসমূহ ও অন্যান্য জিনিস পত্র হবে রূপার তৈরি। আর দু’টি জান্নাতের পাত্রসমূহ ও অন্যান্য জিনিস পত্র হবে সোনার তৈরি। আদন নামক জান্নাতে জান্নাতীগণ ও তাদের মহান প্রভুকে দেখার মাঝে রবের চেহারার উপর বড়ত্বের চাদরের প্রতিবন্ধক ব্যতীত কিছুই থাকবে না। “তোমাদের মধ্যে নিম্নতম জান্নাতীর মর্যাদা এই হবে যে, তাকে আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কামনা-বাসনা পেশ কর, তখন সে কামনা করবে আর কামনা করতেই থাকবে। তখন তিনি বলবেন, ‘তুমি কামনা করছ? সে উত্তর দেবে, ‘হ্যাঁ।’ তিনি তাকে বলবেন, ‘তোমার জন্য সে পরিমাণ রইল যে পরিমাণ তুমি কামনা করেছ এবং তার সাথে তার অনুরূপও রইলো।” জান্নাতের মধ্যে এমন একটি বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় কোনো আরোহী উৎকৃষ্ট, বিশেষভাবে প্রতিপালিত হালকা দেহের দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশো বছর চললেও তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না। জান্নাতে একটি বাজার হবে, যেখানে জান্নাতীগণ প্রত্যেক শুক্রবার আসবে। যে কোনো মুসলিমের তিনটি নাবালক সন্তান মারা যাবে, তাকে আল্লাহ তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের বরকতে জান্নাত দিবেন। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তার নি‘আমত রাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এর বিনিময়ে কী আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি আপনারই পথে যুদ্ধ করেছি; এমন কি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হঠাৎ দৃষ্টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বললেন, “তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।” মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ণ শ্রবণ করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি।’ তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ, “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে।” নিশ্চয় কবর হলো আখেরাতের মনযিলসমূহের প্রথম মনযিল। কেউ যদি এখান থেকে রেহাই পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো কবরের চেয়েও সহজতর হবে। আর কেউ যদি এখান থেকে রেহাই না পায়, তবে তার জন্য পরবর্তী মনযিলগুলো আরো ভয়াবহ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “যারা আমার জন্যে পরম্পরকে মহব্বত করে, আমার খাতিরে পরস্পর বসে, আমার খাতিরে পরস্পর সাক্ষাৎ করে ও আমার খাতিরে একে অপরের জন্যে খরচ করে তাদের জন্য আমার মহব্বত ও ভালবাসা ওয়াজিব হয়ে গেল। আর কিছু লোককে আল্লাহ তাদের অন্তরে যে অমুখাপেক্ষিতা ও কল্যাণ রেখেছেন সে অবস্থার উপর ন্যস্ত করি। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ‘আমর ইবন তাগলিব। তোমাদের পূর্বে যারা ছিলো তাদের মধ্যে এক লোক ছিলো যে নিরানব্বই জনকে হত্যা করেছিলো। সে পৃথিবীর সবচেয়ে জাননেওয়ালা ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলো। তাকে এক পাদ্রীকে দেখিয়ে দেওয়া হলো। সে তার কাছে গিয়ে বলল, সে নিরানব্বই জনকে হত্যা করেছে, তার কোনো তাওবা আছে? পাদ্রী বলল, না। তখন সে তাকেও হত্যা করলো। কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইয়াহূদী অথবা খ্রিষ্টানকে দিয়ে বলবেন, এই তোমার জাহান্নাম থেকে বাঁচার মুক্তিপণ। মনে রাখো, আমার রব আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন তোমাদের শিখাই যা তোমরা জানো না। আজকের এই দিনে তিনি আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন, তা হচ্ছে: যে সব মাল আমি কোন বান্দাকে দিয়েছি তা হালাল। আমি আমার সব বান্দাদের মুসলিম হিসেবে সৃষ্টি করেছি। শয়তান তাদের কাছে এসে তাদেরকে দীন থেকে বিচ্যুত করেছে এবং আমি তাদের জন্য যা হালাল করি তা সে তাদের জন্য হারাম করে দেয় এবং সে তাদের নির্দেশ দেয় যাতে তারা আমার সাথে শির্ক করে যার ওপর কোন দলীল প্রেরণ করা হয়নি। বারা ইবন আযেবের হাদীসে কবরের নি‘আমত ও শাস্তির আলোচনা। “আল্লাহ তা‘আলা যে ব্যক্তিকে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) ও দু’পায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জাস্থান) এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” জান্নাত ও জাহান্নামের তর্ক হলো। জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে প্রবেশ করবে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা।’ আর জান্নাত বলল, ‘দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা আমার ভিতরে প্রবেশ করবে।’ অতঃপর তিনি জাহান্নামকে বলেন, তুমি আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিব। আর জান্নাতকে বলেন, “তুমি আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। “তাঁর শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশী যে, জান্নাতবাসীদের অর্ধেক তোমরাই হবে। এটা এ জন্য যে, শুধুমাত্র মুসলিম প্রাণ ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর মুশরিকদের তুলনায় তোমরা এরূপ, যেরূপ কালো বলদের গায়ে (একটি) সাদা লোম অথবা লাল বলদের গায়ে (একটি) কালো লোম।” জান্নাতীগণ (তাদের উপরস্থ) খাসকামরার লোকগণকে এমনভাবে দেখবে, যেভাবে তোমরা আকাশের তারকা দেখে থাক।