“প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়; বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে।” “মুমিনদের মাঝে ঈমানে সেই পরিপূর্ণ, তাদের মাঝে যার চরিত্র সুন্দরতম। তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” “দুনিয়া ভোগ্যপণ্য এবং দুনিয়ার উত্তম উপভোগ্য উপকরণ হল পুণ্যবতী নারী।” “মহান আল্লাহ বলেন, খরচ কর, হে, আদম সন্তান ! আমিও খরচ করবো তোমার প্রতি।” “শর্তাবলীর মধ্যে যা পূরণ করার অধিক দাবী রাখে তা হল সেই শর্ত যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ।” “যখন ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য সাওয়াবের উদ্দেশ্যে খরচ করে, তবে তা তার জন্যে সদাকা।” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’কাযা’ আংশিক চুল কর্তন করা থেকে নিষেধ করেছেন।(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিভিন্ন প্রয়োজনে (বিবাহ ইত্যাদি অনুষ্ঠানে) পাঠের জন্য খুৎবা শিক্ষা দিয়েছেন। অভিভাবক ছাড়া কোনো বিয়ে নেই। “দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ-শ্যামল এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অত:পর তিনি দেখবেন তোমরা কিভাবে আমল করো? সুতরাং তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে। لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ বংশীয় সম্পর্কের দরুন যাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারাম, দুধপান জনিত সম্পর্কের দরুণও অনুরূপ মহিলাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হারাম। যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার প্রয়োজনে আহবান করবে, তখন সে যেন (তৎক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে উনানের কাছে (রুটি ইত্যাদি পাকানোর কাজে ব্যস্ত) থাকে। হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সমর্থ রাখে সে যেন অবশ্যই বিয়ে করে। কারণ, এটা চোখকে অধিক সংযত করে ও লজ্জাস্থানকে সবচেয়ে বেশি হিফাযত করে, আর যে সমর্থ রাখে না সে সিয়ামকে আবশ্যক করে নিবে। কারণ, সিয়াম তার যৌন চাহিদাকে দমনকারী। তোমরা স্ত্রীলোকদের কাছে প্রবেশ করা থেকে দূরে থাক। এক আনসারী সাহাবী জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! দেবর সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি বললেন, দেবর তো মৃত্যু সমতুল্য। বিবাহিত মহিলাকে তার নির্দেশ ছাড়া বিবাহ দেওয়া যাবে না। আর কুমারী নারীকে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেওয়া যাবে না। তার বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তার অনুমতি কীভাবে গ্রহণ করা হবে? তিন বললেন, তার চুপ থাকা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন যারা নারীর অনুরূপ পোশাক পরিধান করে এবং সেসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে। হে মহিলা সমাজ! তোমরা সাদকাহ করতে থাক। কারণ, আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তারা জিজ্ঞেস করলেন, কী কারণে, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক, আর স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। বুদ্ধি ও দীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চেয়ে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখি নি। ঈদুল ফিতর এবং ‘ঈদুল আযহা- এ দুই দিন কেউ সাওম পালন করবে না। তিন—‘আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উদয় পর্যন্ত কেউ কোন সালাত আদায় করবে না। চার—আর মাসজিদে হারাম (কা‘বা), আমার মাসজিদ (মাসজিদে নাববী) এবং মাসজিদে আকসা (বাইতুল মাকদিস)- এ তিন মাসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মাসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে না। পুরুষদের বেলায় তাসবীহ্ (সুবহানাল্লাহ্) বলা, তবে মহিলাদের বেলায় ‘তাসফীক’ (এক হাতের তালু দিয়ে অন্য হাতের তালুতে মারা)। রেওয়াজ অনুযায়ী তুমি তার সম্পদ থেকে গ্রহণ কর যা তোমার ও তোমার সন্তানদের জন্য যথেষ্ট হয়। আব্দুর রহমান ইবন ‘আওফ এবং যুবায়ের ইবন আ‘ওয়াম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম এক যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট (গায়ে) উকুনের উপদ্রবের অভিযোগ করেন। “তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও।” তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে দাসদের মত প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবতঃ দিনের শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হবে। তুমি যদি চাও সবর কর, তোমার জন্যে জান্নাত রয়েছে। আর যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকটে দু‘আ করব। যখন কোন নারী মসজিদে যাওয়ার জন্য অনুমতি চায় তাকে যেন বাধা না দেয়। তিনি বলেন, এ কথা শোনে বিলাল ইবন আব্দুল্লাহ বলল, আল্লাহর কসম আমি তাদের বারণ করব। তিনি বলেন, তারপর আব্দুল্লাহ তার সামনে আসলেন এবং তাকে খুব খারাপ ভাষায় গালি দিলেন। আমি তাকে আর কখনো এ ধরনের গাল দিতে শুনিনি। তিনি বললেন, আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে সংবাদ দিচ্ছি আর তুমি বলছো আল্লাহর কসম আমি তাদের বারণ করব। কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সেই ব্যক্তি হবে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং স্ত্রী তার সঙ্গে মিলন করে। অতঃপর সে তার (স্ত্রীর) গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়। হে আল্লাহ! আমি দু’দুর্বলের অর্থাৎ ইয়াতীম ও নারীর অধিকার (নষ্ট করা) নিষিদ্ধ করছি । উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম; উপরের হাত হলো দানকারীর এবং নিচের হাত হলো যাচ্ঞাকারীর। আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির ওপর রহম করুন যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে এবং তার স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়। তার স্ত্রী যদি জাগ্রত হতে না চায় তবে তার মুখমণ্ডলে পানির ছিটা দেয়। সে মহিলার ওপরও আল্লাহ তা‘আলা রহম করুন, যে রাত্রের কিছু অংশ জেগে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। অতঃপর তার স্বামীকেও জাগিয়ে দেয়, সে যদি জাগ্রত হতে না চায় তবে তার মুখে পানির ছিটা দেওয়া। ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে সংশোধন করার জন্যে ভালো কথা পৌঁছায় অথবা ভালো কথা বলে। তোমার ভাইকে সাহায্য কর যালিম হোক বা মযলুম হোক। রেশম পরিধানকারীদের আখিরাতে কোনো অংশ নেই রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে, আর তাদের নারীদের জন্য করা হয়েছে হালাল। সে আমাদের অনুসরণ করে চলে এসেছে। তুমি চাইলে তাকে প্রবেশের অনুমতি দিবে, অন্যথায় সে ফিরে যাবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিন আঙ্গুল দিয়ে খেতে দেখেছি।খাবার শেষে তিনি সেগুলো চেখে খেতেন। হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহর সন্তান-সন্ততির ওপর ব্যয় করি, তাতে কি আমি নেকী পাব? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারছি না, তারা তো আমারই সন্তান।’ তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তাদের ওপর ব্যয় করার দরুন নেকী পাবে। “আশ‘আরীগণ যখন জিহাদের ময়দানে অবস্থান করত অথবা মদীনায় তাদের পরিবারের খাদ্য ঘাটতি দেখা দিত” যে দিনার তুমি আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, যে দিনার তুমি গোলাম আযাদ করতে খরচ করেছ, যে দিনার তুমি মিসকিনের উপর খরচ করেছ এবং যেটি তুমি পরিবারে খরচ করেছ, তার মধ্যে তুমি যেটি পরিবারের জন্য সেটর সাওয়াবই সবচেয়ে বেশী। মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট অনেক মহিলার সমাগম হয়েছে, যারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। (জেনে রাখ, মারকুটে) ঐ (স্বামী)রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ নয়। যখনই কোনো মহিলা দুনিয়াতে নিজ স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখনই তার সুনয়না হূর স্ত্রী (অদৃশ্যভাবে) ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে বলে, ‘আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তাকে কষ্ট দিও না। সে তো তোমার নিকট সাময়িক মেহমান মাত্র। অচিরেই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে এসে যাবে। “আমি যদি কাউকে কারো জন্য সাজদাহ করার আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিগার নামক বিবাহ পদ্ধতি থেকে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট প্রবেশ করল, তখন আমার নিকট একজন মানুষ ছিল। তিনি বললেন, হে আয়েশা লোকটি কে? আমি বললাম, আমার দুধ ভাই। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা তুমি যাচাই করে দেখ কারা তোমার ভাই? কারণ, ভাই হওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষুধা নিবারণের জন্য দুধ পান করাই ধর্তব্য। হে আল্লাহর রসূল! আমি জনৈক মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কী দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন। একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর। তাহলে আমাকে সাক্ষী কর না, কারণ আমি যুলুমের উওপর সাক্ষী দিই না। “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আযলের বিষয়টি আলোচনা করা হলো, তিনি বললেন, তোমাদের কেউ সেটা কেন করে? কারণ, আল্লাহ যাকে সৃষ্টি করবেন, সেটা অবশ্যই করবেন।” উসমান ইবন মাযউনের জন্য বৈরাগ্যকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি যদি তাকে অনুমতি দিতেন, আমরা অবশ্যই খাসি হয়ে যেতাম। আমরা আযল করতাম অথচ তখন কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল। যদি এটি নিষিদ্ধ হত, তবে অবশ্যই কুরআন আমাদের নিষেধ করত। মৃত ব্যক্তির উপর কোনো নারী তিন দিনের বেশী শোক পালন করবে না, তবে স্বামীর উপর চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। আর কোনো রঙিন কাপড় পরিধান করবে না। তবে সাদা-কালো কাপড় পড়তে পারবে। সে সুরমা ব্যবহার করবে না এবং সুঘ্রাণ স্পর্শ করবে না। তবে ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার সময় দুর্গন্ধ দূর করার জন্য ধোঁয়া জাতিয় সামান্য সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে। একজন নারীকে তার ফুফু বা খালার সাথে জমা করা যাবে না। আমি রাসূলুল্লাহকে বলতে শুনেছি: আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে এমন কোনো মহিলার জন্য তার স্বামী ছাড়া কোনো মৃত ব্যক্তির ওপর তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। তবে স্বামী হলে সে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে। সুন্নাত হলো যখন বয়স্ক স্ত্রীরের ওপর কুমারীকে বিবাহ করবে তার নিকট সাত থাকবে তারপর বন্টন করবে। আর যদি বয়স্ক বিবাহ করে তবে তার নিকট তিন দিন থাকবে তারপর বন্টন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হামযাহ’র মেয়ে সম্পর্কে বলেছেন, সে আমার জন্য হালাল নয়। কেননা বংশ কারণে যা হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণেও তা হারাম হয়, আর সে আমার দুধ ভাইয়ের মেয়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন? আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, “তিনি পারিবারিক পেশায় নিয়োজিত থাকতেন অর্থাৎ স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন অতঃপর যখনই সালাতের সময় হতো তখনই তিনি সালাতের জন্য বের যেতেন”। যে ব্যক্তি নিজ পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে দাবী করে, অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। তোমরা তোমাদের পিতাদের থেকে বিমুখ হয়ো না। কারণ, যে কেউ স্বীয় পিতা থেকে বিমুখ হলো সে তো কুফুরী করলো। আবুল আব্বাস সাহল ইবন সা’দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সংবাদ পৌঁছল যে, আমর ইবন আউফ গোত্রের মাঝে অনিষ্ট (ঝগড়া-বিবাদ) সংঘটিত হয়েছে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু লোককে নিয়ে তাদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা ক’রে দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির হলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেলেন। অপর দিকে সালাতের সময় হয়ে গেল। সুতরাং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট এসে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেছেন। এদিকে সালাতেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি সালাতে লোকেদের ইমামতি করবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি চাও।’ অতঃপর বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালাতের ইকামত দিলেন আর আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এগিয়ে গিয়ে (তাহরীমার) তকবীর বললেন লোকেরাও তকবীর বলল। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম ক’রে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালাতরত অবস্থায় কোন দিকে তাকাতেন না, কিন্তু লোকেদের অধিক মাত্রায় হাততালির কারণে তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় (নিজের জায়গায় থাকতে) নির্দেশ দিলেন। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর হাত উপরে তুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পিছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে গিয়ে লোকদের ইমামত করলেন এবং সালাত শেষ ক’রে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, “হে লোক সকল! কি ব্যাপার যে, সালাত অবস্থায় কিছু ঘটতে দেখে তোমরা হাততালি দিতে শুরু করলে? (জেনে রেখো, সালাতে) হাততালি দেওয়া তো মহিলাদের কাজ। সালাত অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, এটা শুনলে কেউ তার দিকে ভ্রুপেক্ষ না ক’রে পারবে না। হে আবূ বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন ইমামত করতে তোমার কিসের বাধা ছিল?” তিনি বললেন, ‘আবূ কুহাফার ছেলের জন্য সঙ্গত ছিল না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে লোকেদের ইমামত করবে।’ (বুখারী ও মুসলিম) আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, একজন মহিলা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার এক সতীন আছে, সুতরাং স্বামী আমাকে যা দেয় না, তা নিয়ে যদি পরিতৃপ্তি প্রকাশ করি, তাতে আমার কোন ক্ষতি হবে কি?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যা দেওয়া হয়নি, তা নিয়ে পরিতৃপ্তি প্রকাশকারী মিথ্যা দুই বস্ত্র পরিধানকারীর ন্যায়।” আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কেবলমাত্র পুরুষেরাই আপনার হাদীস শোনার সৌভাগ্য লাভ করছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যও একটি দিন নির্ধারিত করুন। আমরা সে দিন আপনার নিকট আসব, আপনি আমাদেরকে তা শিক্ষা দেবেন, যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ তিনি বললেন, “তোমরা অমুক অমুক দিন একত্রিত হও।” অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এসে সে শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর তিনি বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে কোন মহিলার তিনটি সন্তান মারা যাবে, তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড় হয়ে যাবে।” এক মহিলা বলল, ‘আর দু’টি সন্তান মারা গেলে?’ তিনি বললেন, “দু’টি মারা গেলেও (তাই হবে)। মুত্তাফাকুন আলাইহি। তোমরা মাথা মুণ্ডন করলে পুরোপুরি মুণ্ডন করবে অথবা পুরোপুরি ছেড়ে দিবে। তোমাদের কারো যদি একটি জুতার ফিতা ছিড়ে যায়, তখন সে যেন তা মেরামত না করা পর্যন্ত এক জুতা পায়ে দিয়ে না হাঁটে। এটি কোনো কিছু দিয়ে পরিবর্তন করে দাও; তবে কালো রং বর্জন করবে। তোমরা পাকা চুল-দাঁড়ি উপড়ে ফেলো না। কেননা এগুলো মুসলিমের জন্য কিয়ামতের দিন উজ্জ্বল নূর হবে। বারীরাহ ও তার স্বামীর ঘটনার হাদীস আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত: সে তার স্ত্রীকে মাসিক অবস্থায় তালাক দিয়েছিল। বিষয়টি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পেশ করলেন। এতে রাসূলুল্লাহ খুব ক্ষুব্ধ হন। অতঃপর তিনি বললেন, সে যেন তাকে ফিরিয়ে নেয় এবং পবিত্র হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছেই রাখবে, অতঃপর সে ঋতুবতী হবে ও পবিত্র হবে। তারপর যদি তালাক দেওয়াকে ভালো মনে করে তাকে যেন সহবাসের পূর্বে পবিত্র অবস্থায় তালাক দেয়। এটিই ইদ্দত যেমনটি আল্লাহ আদেশ করেছেন। অপর শব্দে বর্ণিত : “যতক্ষণ না যে হায়যে তালাক দিয়েছে সে হায়েয ব্যতীত আরেকটি পরিপূর্ণ হায়েয না আসে।” অপর শব্দে বর্ণিত: “তারপর তা তার তালাক থেকে গণ্য করা হয় এবং রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী আব্দুল্লাহ তাকে ফিরিয়ে নেয়”। হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী একটি কালো ছেলে জন্ম দিয়েছে। তখন তিনি বললেন, তোমার কোন উট আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, সেগুলোর রং কী? সে বলল, লাল। তিনি বললেন, সেগুলোর মধ্যে কি ছাই বর্ণের কোন উট আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। তিনি বললেন, এটা কোথা থেকে হলো? সে বলল, হয়তো কোন শিরা (বংশমূল) তা টেনে এনেছে। তিনি বললেন, তাহলে হয়ত তোমার এ পুত্র কোন শিরা (বংশমূল) টেনে এনেছে। (এ বিয়ে) কীভাবে সম্ভব? অথচ সে বলছে যে, সে তোমাদের দু’জনকে দুধ পান করিয়েছে? তুমি কি দেখলে না, ধারণাকারী যায়েদ ইবন হারিসা ও উসামা ইবন যায়েদকে দেখে বলেছে: এই পাগুলোর একটি অপরটি থেকে সৃষ্ট মনে হচ্ছে? নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের দিন মুতা‘ বিবাহ ও গৃহপালিত গাধার গোস্ত খেতে নিষেধ করেছেন। তোমার ওপর ভরণ-পোষণের খরচাদি নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়াকে মুক্ত করেছেন, আর তাকে মুক্ত করাকেই তার মোহর নির্ধারণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে অপবাদ দিল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দু’জনকে নির্দেশ দিলেন, তারা দু’জনই লি‘আন করল, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন। অতঃপর নারীর জন্য সন্তানের ফয়সালা করলেন এবং দু’জনের মাঝে পৃথক করে দিলেন। তার ওপর তোমার কোনো হক নেই, সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল আমার সম্পদ? তিনি বললেন, তোমার সম্পদও নেই, যদি তুমি সেটা তাকে মোহর হিসেবে দিয়ে থাক। তাহলে তা তার লজ্জাস্থানকে হালাল করার বিনিময় হয়ে গেছে। আর যদি মিথ্যা বল, তাহলে তো তুমি তার থেকে আরো দূরে। স্বামী মারা গেলে নারীরা ছোট ঘরে প্রবেশ করত এবং সবচেয়ে খারাপ কাপড় পরিধান করত, কোনো সুগন্ধি স্পর্শ করত না, এমনিতে এক বছর কেটে যেত। অতঃপর চতুষ্পদী জন্তু (গাধা অথবা পাখি অথবা বকরি) এনে তার গা চাটানো হত! ইদ্দত সংক্রান্ত সুবাইয়্যাহ আসলামিয়্যাহর হাদীস যদি সে আমার ঘরে পালক না হত, তবুও আমার জন্যে সে হালাল হত না। কারণ, সে আমার দুধ ভাইয়ের মেয়ে। আমাকে ও আবু সালামাকে সুআইবাহ দুধ পান করিয়েছেন। অতএব, তোমরা তোমাদের মেয়ে ও বোনদের আমার ওপর (বিয়ের জন্যে) পেশ কর না। তুমি কি চাও পুণরায় রিফা‘আহ নিকট ফিরে যেতে? তবে তা তুমি পারবে না যতক্ষণ না তুমি তার স্বাদ এবং সে তোমার স্বাদ গ্রহণ না করবে। বিছানা যার, সন্তান তার। ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের জন্য জাফরানী রঙ্গের কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত তার ইদ্দাত পূর্ণ হয়ে গেছে। তাকে বিবাহের প্রস্তাব দাও।