عن أبي هريرة رضي الله عنه مرفوعاً: «إذا أوى أحدكم إلى فراشه فَليَنْفُضْ فِرَاشَهُ بِدَاخِلَةِ إزَارِهِ فإنَّهُ لا يدري ما خلفه عليه، ثم يقول: باسمك ربي وضعت جنبي، وبك أرفعه، إن أمسكت نفسي فارحمها، وإن أرسلتها، فاحفظها بما تحفظ به عبادك الصالحين».
[صحيح] - [متفق عليه]
المزيــد ...
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করবে, তখন সে যেন নিজ লুঙ্গির একাংশ দ্বারা তার বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, তার অনুপস্থিতিতে কী কী জিনিস সেখানে এসেছে। তারপর এই দু‘আ পড়বে। অর্থাৎ, হে আমার রব! আমি তোমারই নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম এবং তোমারই নামে তা উঠাব। অতএব যদি তুমি আমার আত্মাকে আবদ্ধ করে নাও, তাহলে তার প্রতি করুণা করো। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তাহলে তাকে ঐ জিনিস দ্বারা হিফাযত কর, যার দ্বারা তুমি তোমার নেক বান্দাদের করে থাক।”
[সহীহ] - [মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।]
এ হাদীসটি অর্থ ঘুমের যিকিরসমূহকে কেন্দ্র করে। আর ঘুমের মুহুর্তটা এমন একটি মুহূর্ত যে মুহুর্তে মানুষ তার রুহকে স্বীয় রবের নিকট সোপর্দ করে। তারপর থেকে সে কোনো কল্যাণ ধরতে ও অনিষ্ট প্রতিহত করতে পারে না। ফলে সে তার আত্মাকে রক্ষার জন্য তার স্রষ্টার হাতে ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণভাবে সোপর্দ করে। আলেমগণ বলেন: ঘুমোতে যাওয়া ও ঘুম থেকে উঠার সময় যিকির ও দো‘আ করার হিকমত হলো যাতে তার আমলসমূহের সমাপ্তি এবং তার কর্মসমূহের শুরু আল্লাহর আনুগত্যের ওপর হয়। এই পবিত্র হাদীসটিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন যে, ঘুমের সময় একজন বান্দার জন্যে কিছু কর্ম করা ও কিছু বাণী উচ্চারণ করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের করনীয় কর্মগুলোর দিক নির্দেশনা দিয়েছেন এতে। যেমন তিনি বলেন, “যখন তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করবে, তখন সে যেন বিছানাটা ঝেড়ে নেয়।” কারণ, আরবদের অভ্যাস ছিল, তারা বিছানা আপন অবস্থায় রেখে যেত। তার চলে যাওয়ার পর হতে পারে কষ্টদায়ক পোকা মাকড় প্রবেশ করতে পারে অথবা ধুলাবালির ইত্যিাদির কারণে ময়লাযুক্ত হতে পারে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝেড়ে নেওয়া ও পরিষ্কার করার বস্ত্রের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নিজ লুঙ্গির একাংশ দ্বারা তার বিছানাটা ঝেড়ে নিবে।” ইযার হলো, শরীরের নিচের অংশের পরিধেয়। এখানে উদ্দেশ্য কাপড়ের ভেতরের সাইটের একাংশ। কারণ, এভাবে ঝাড়তে সুবিধা, এবং তাতে উপরের অংশে ময়লা প্রভৃতি না লাগে। আর সতরও সুরক্ষা হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়া ও পরিষ্কার করার কারণ সম্পর্কে বলেন, “কারণ, সে জানে না যে, তার অনুপস্থিতিতে কী কী জিনিস সেখানে এসেছে।” এতে প্রমাণিত হয়, শরীরের নিরাপত্তার প্রতি শরী‘আত কতই না আগ্রহী। কারণ, দেহের প্রতিষ্ঠার দ্বারাই দীনের প্রতিষ্ঠা। এভাবে কারণ সহ ঘুমের সময় করণীয় সুন্নাতের বর্ণনা দিলেন। দ্বিতীয়ত: মুখে বলার সুন্নাত। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, " ثم يقول: باسمك ربي " “হে আমার রব! আমি তোমারই নামে।” অর্থাৎ মহান আল্লাহর নামে আমি এ ক্ষণস্থায়ী দেহকে বিছানার উপর রাখলাম। এ থেকে প্রমাণিত হয় একজন মানুষের জন্য মুস্তাহাব হলো সব সময় সে তার রবের যিকিরের ওপর থাকবে। অতঃপর বলবে, “আমার পার্শ্ব রাখলাম” অর্থাৎ, এ দেহকে তোমার যিকির ছাড়া রাখবো না এবং উঠাবোও না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অতএব, যদি তুমি আমার আত্মাকে আবদ্ধ করে নাও, তাহলে তার প্রতি করুণা কর।” এতে মৃত্যুর প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। রাসূলুল্লাহর বাণী: "وإن أرسلتها" “আর যদি তা ছেড়ে দাও” জীবিত করার প্রতি ইঙ্গিত। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: " فاحفظها بما تحفظ به عبادك الصالحين» “তাহলে তাকে ঐ জিনিস দ্বারা হিফাযত কর, যার দ্বারা তুমি তোমার নেক বান্দাদের করে থাক।” অর্থাৎ তুমি আমার আত্মা ও রূহকে ঐ জিনিস দ্বারা হিফাযত কর যে জিনিস দ্বারা তুমি তোমার নেক বান্দাদের হিফাযত কর। আর তা হলো সব ধরনের গোনাহ, অন্যায় ও ধ্বংসাত্মক কর্ম থেকে হিফাযত করা। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: " احفظ الله يحفظك" “তুমি আল্লাহকে হিফাযত কর, আল্লাহ তোমাকে হিফাযত করবেন।” এটি হলো সাধারণ হিফাযত। এ কারণেই তা কেবল সালেহীনদের সাথে খাস করেছেন। কারণ, নেক আমল ছাড়া রবের হিফাযত লাভ করা কারো জন্যই সম্ভব নয়। সুতরাং যারা সীমালঙ্ঘন করে ও পাপ করে তারা আল্লাহর বিশেষ হিফাযত লাভ করবে না। আল্লাহর বিশেষ হিফাযত কেবল তার ওলীগণ পাবে না। তবে সাধারণেরা আল্লাহর সাধারণ হিফাযতের কিছু অংশ পাবে।